কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয় জানুন

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই। আশা করি আল্লাহর রহমতে অনেক বেশি ভালো আছেন আজ আমরা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি, যে বিষয় টির সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান থাকা অত্যাবশক।
তো চলুন আজ আমরা জেনে নেই কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয় এবং বীর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আরও খুঁটিনাটি বিষয়াদি।
ভূমিকা
বীর্য মানুষের দৈহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এবং ইসলাম ধর্ম বীর্যপাত হলে তার থেকে নিজেকে পবিত্র করাকে গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। কেননা বীর্য নাপাক এবং নাপাক সহ এবাদত কবুল হয় না। যার জন্য নিজেকে বীর্য থেকে সর্বদা পাক সাফ রাখা শরীয়তের দৃষ্টি কোণে ফরজ ।
বীর্য (মনী)
স্বামী-স্ত্রী মিলনের সময় কিংবা অন্য কোন কারণে উত্তেজনার সাথে লজ্জাস্থান থেকে যে বীর্য বের হয় ইসলামী পরিভাষায় তাকে বীর্য (মনি)বলে।
আরেকটু সহজ করে যদি বলি বীর্য বলা হয় শরীর থেকে সবেগে বের হওয়া সাদা, ঘন, গাঢ় তরল, ময়দার খামিরের মত অসচল পানিকে।
কাম রস (মযি)
স্ত্রীলোকের নিকটবর্তী হলে অথবা স্ত্রীকে স্পর্শ বা চুম্বন করলে কিংবা খারাপ কোন চিন্তা-ভাবনা করার কারণে উত্তেজনার প্রাথমিক অবস্থায় যৌনাঙ্গের অগ্রভাগ থেকে হালকা লালা জাতীয় যে পদার্থ বের হয় ইসলামী পরিভাষায় তাকে মজি বলে।
বীর্য এবং কাম রসের (মনী ও মযি) মধ্যে পার্থক্য
বীর্য এবং কাম রসে (মনী ও মযি) এর মধ্যে মৌলিক তিনটি পার্থক্য রয়েছে।
- বীর্য সবেগে শক্তি দিয়ে বের হয়। আর কাম রস গতি ছাড়া বের হয়। কখনো কখনো কাম রস বের হওয়ার সময় টেরও পাওয়া যায় না।
- বীর্য সাদা ঘন গাড়ো তরল। এর গন্ধ কিছুটাগাছের মঞ্জরী বা ময়দার খামিরের মত। পক্ষান্তরে কামরস হচ্ছে- স্বচ্ছ, পাতলা, পিচ্ছিল তরল; এর কোন গন্ধ নেই।
- বীর্য বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে, কামরস বের হওয়ার পর এরকম কোন নিস্তেজতা আসে না।
আল-মাজমু’ গ্রন্থে (২/১৪১)
বীর্য এবং কাম রসের হুকুম
বীর্য (মনি) বের হলে তার ওপর গোসল ফরজ।
এ বিষয়ে হাদিসের দলিল
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি অধিক মযি সম্পন্ন লোক ছিলাম (অর্থাৎ প্রচুর মযি বের হত) রাসুল সাঃ আমাকে বললেন, যখন তুমি মযি বের হতে থাকবে, তখন তোমার লজ্জা স্থান ধুয়ে নেবে এবং নামাজের ওজন নেই ওযু করে নেবে, আর যখন উত্তেজনার সাথে পানি (মনি) বের করবে, তখন গোসল করে নিবে।
(নাসাঈ শরীফ হাদিস নং ১৯৩)
কাম রস (মযি) বের হলে গোসল ফরজ হয় না, তবে ওযু ভেঙ্গে যায়। সুতরাং ওই স্থান ধুয়ে অজুকরে নিলে যথেষ্ট।
এ বিষয়ে হাদিসের দলিল
হযরত আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হযরত আলী রাঃ বলেছেন, আমার অধিক মযি বের হতো। এবং আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম কে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা বোধ করতাম রাসুলের কন্যা ফাতিমা আমার স্ত্রী হওয়ায়। একদিন আমার পাশে বস এক ব্যক্তিকে বললাম, তুমি রাসূল সাঃ কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো। তখন রাসুল সাঃ বললেন মজি বের হলে শুধু ওযু করতে হবে গোসলের প্রয়োজন নেই।
(নাসাই শরীফ হাদিস নং ১৫২)
কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয়
উল্লেখিত বীর্য এবং কাম রস এর পার্থক্য গুলো ভালোমতো পড়ে থাকলে অবশ্যই আপনি খুব সহজে বীর্য এবং কাম রস নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হল কি পরিমান বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয়?
বীর্যর পরিমাণ যতটুকুই হোক না কেন ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছাকৃত ও যদি তা শরীরের বাহিরে বের হয়ে আসে গোসল ফরজ হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে কাম রস (মযি) যদি কারোর তা বের হয় সে ক্ষেত্রে তার অজু ভেঙ্গে যাবে যার ফলে নতুন করে ওযু করতে হবে। কিন্তু গোসল করতে হবে না।
মোটকথা
বীর্যের পরিমাণ যতটুকুই হোক তা বের হলে গোসল ফরজ হয়। আর কাম রস এর পরিমাণ যাই হোক তা বের হলে গোসল ফরজ হয় না, কিন্তু ওযু ভেঙ্গে যায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যদি কারোর কাপড়ে কিংবা শরীরে কাম রস লেগে যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তার থেকে পূর্ণাঙ্গ পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। কেননা কামরসও পেশাব, পায়খানার মত নাজাসাত তথা নাপাক।
শেষ কথা
আজকের postsbd এর এই আর্টিকেলে বীর্য এবং কাম রস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পাশাপাশি কতটুকু বীর্য বের হলে গোসল ফরজ হয় তা আপনাদেরকে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে বীর্য এবং কাম রস সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন।