কলা খাওয়ার সঠিক সময় কখন জানুন 2024

আজকের পোস্টে কলা খাওয়ার সঠিক সময় কখন, কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার অপকারিতা সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি কলা সম্বন্ধে খুঁটিনাটি বিষয়গুলি জানতে চান তাহলে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
কলা
অতি জনপ্রিয় পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু একটি ফল কলা। এই ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ বি সি ও ক্যালসিয়াম। অন্যান্য ফল ফলাদি থেকে কলার দাম খুবই কম এবং প্রায় পুরো বছরই পাওয়া যায় ফলটি। এইজন্যই ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর লোক খুব সহজেই কলা খেতে পারেন নিয়মিত। আপনি জেনে অবাক হবেন কলার উৎপাদন সুগন্ধ ও স্বাদের দিকে শ্রেষ্ঠতর হওয়ায়, কলাকে কিন্তু ফলের রানী ও বলা হয়।
কলা খাওয়ার উপকারিতা
নিম্নে কলা খাওয়ার বেশ কয়েকটি উপকারিতা উল্লেখ্য করেছি
হজম শক্তি
আপনার যদি হজম শক্তি ভালো না হয়। সেক্ষেত্রে আপনি নিয়মিত দুই থেকে তিনটি কলা খেতে পারেন। তাতে আপনার খুব ভালো হজম শক্তি হতে শুরু করবে। কারণ কলা আপনার পেটের কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তা দূর করে দেবে।
ক্ষুধা দূর করে
আপনার যদি প্রচন্ড পরিমাণের ক্ষুধা লেগে লেগে থাকে। ভরপুর খাবার খাওয়ার পরেও আপনার কিছুতেই ক্ষুধা কমেনা। সে ক্ষেত্রে আপনি কলা খেয়ে দেখতে পারেন। কারণ কলাতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অল্প ক্যালোরি। তাতে আপনার অধিক পরিমাণের ওজন বাড়ার কোনোই ভয় নেই। যদি আপনি নিয়ন্ত্রান্ত্রি কলা খান। আমি বলব আপনার যদি অধিক তর ক্ষুধা লেগে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি দৈনন্দিন ১ থেকে ২টি করে কলা খাবেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
কলায় ভিটামিন সি থাকায় আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক বেশি সাহায্য করবে। আমরা যারা খুব বেশি দুর্বল এবং খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ি সে ক্ষেত্রে আমরা নিয়মিত ৩ থেকে ৪ টা কলা খেতে পারি।
পড়ুনঃ বাচ্চাদের জ্বর কমানোর বাংলা দোয়া
কারণ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি এর ফলে আপনার শরীরে জোগাবে এক্সট্রা হেলদি এবং শক্তি। যার ফলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে আগের থেকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
কলায় থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণের পটাশিয়াম আপনার শরীরের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আপনি যদি মনে করেন যে আপনার শরীরের রক্তচাপ আগের তুলনায় অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে আপনি কলা ট্রাই করতে পারেন। কারণ কলাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণের পটাশিয়াম। আর পটাশিয়াম শরীরের রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
9 foods will keep the kidneys clean
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
উচ্চতর গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত প্রায় ২৭ শতাংশ হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে ফেলে কলা। কারণ কলাতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। তাই আমি বলব আপনি যদি হৃদরোগের কোন আলামত ফেস করেন সে ক্ষেত্রে আপনি নিয়ম মেনে কলা সেবন করতে পারেন।
কিডনি সতেজ
কলার আরো একটি বড় গুণ হলঃ নিয়মিত কলা সেবন করার দ্বারা কিডনি ভালো থাকে। আপনারা যারা কিডনি জনিত কোন সমস্যা ফেস করছেন। সে ক্ষেত্রে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শে। নিয়মিত কলা সেবন করতে পারেন।
এনার্জি বৃদ্ধি
মজার বিষয় হচ্ছে জটপট এনার্জি বৃদ্ধি করতে কলা খুব বেশি ভূমিকা পালন করে। এক কথায় আপনি কলা খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভালো ফল পেয়ে যাবেন।
What is the best syrup for gastric?
আপনার যদি কখনো মনে হয় যে শরীর দুর্বল কিংবা এনার্জির ঘাটতি রয়েছে সেক্ষেত্রে আপনি বসে ঝটপট ২ থেকে ৩ টি কলা খেয়ে ফেলুন দেখুন এনার্জি কোত্থেকে দৌড়ে আপনার কাছে চলে আসে। আমিও যখন এনার্জি শূন্যতায় ভুগি চেষ্টা করি কলা খেতে। আপনিও ট্রাই করতে পারেন।
উজ্জল ত্বক
কলায় থাকা এন্টিঅক্সিজেন আপনার ত্বক কে করবে অধিকতর উজ্জ্বল। আমি আপনাকে বলছি না যে আপনার গায়ের রং কালোকে সাদা করে দেবে কিংবা ফর্সা করে দেবে। মানুষ যেই বর্ণেরই হোক না কেন মুখের একটি উজ্জ্বলতা রয়েছে। ঠিক সেই উজ্জ্বলতাকেই বৃদ্ধি করবে কলা। তাই আপনারা যারা অধিকতর চিন্তা কিংবা রাত জাগেন। চেষ্টা করবেন নিয়মিত খাবারের লিস্টে খোলা রাখতে। কারণ কলা আপনার মুখের ফেকহাসি দূর করে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
চুল ভালো রাখে
নিয়মিত কলা খেলে আপনার চুল সিল্কি এবং চুলের গোড়ালি মজবুত হতে থাকে। যাদের চলে অধিক তোর খুশকি তারাও নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ কলা ট্রাই করতে পারেন। কলাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিজেন আপনার চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে।
কলা খাওয়ার অপকারিতা
ওজন বৃদ্ধি পাওয়া
সাধারণ একটি কলাতে ১০৫ ক্যালোরি থাকে। তাই আপনি যদি বেশি কলা খেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি বেড়ে যাবে।
মাইগ্রেন
কারো যদি মাইগ্রেন জনিত কোন সমস্যা থাকে। সে ক্ষেত্রে আপনারা কলা থেকে যত সম্ভব এড়িয়ে চলবেন। কারণ কলাতে রয়েছে রামাইন। যা মাইগ্রেন এর বৃদ্ধি কারন।
এলার্জি
কলা খেলে আপনার এলার্জি হতে পারে। যদি কখনো এরকম টা ফিল হয় যে কলা খাওয়ার কারণে আপনার গলা জ্বালাপোড়া কিংবা ঠোঁট ফুলে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপনার জন্য উচিত হবে কলা থেকে সতর্ক থাকা।
পেট ব্যথা
বাজারের অধিকাংশ কলাই পাকানো হয় রাসায়নিক সাহায্যে। সে ক্ষেত্রে কলা খেলে আপনার পেট ব্যাথা হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট
যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। অতিরিক্ত কলা খেলে আপনাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
গ্যাস
অতি কলা খেলে আপনার গ্যাস হতে পারে। কারণ কলাতে রয়েছে ফ্রুক্টোজ এবং ফাইবার।
প্রশ্নোত্তর
কলা খাওয়ার সঠিক সময় কখন?
কলা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। কলা খাওয়ার সঠিক সময় হলো সকালে ভরা পেটে কিংবা দুপুরে খালি পেটে।
রাতে কলা খাওয়া কি ভালো?
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে করটিসোল যা হরমোন নিঃসরণ করে। যার ফলে রাতে খুব ভালো ঘুম হয়।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা কি?
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন। যার ফলে সকালে নিয়মিত কলা খেলে আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি হবে। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন খালি পেটে না খাওয়ার।
একদিনে কয়টা কলা খাওয়া উচিত?
প্রতিদিন দুটি কলা খাওয়া সবচেয়ে বেশি উপকারী।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
রাতে আপনি কলা খেলে আপনার ঘুম অত্যন্ত ভালো হবে। কেননা কলাতে রয়েছে করটিসোল যা হরমোন নিঃসরণ করে।
পাকা কলা খেলে কি ওজন কমে?
আমরা অনেকেই ওজন নিয়ে চিন্তিত এবং তাও চিন্তা করি যে কলা খেলে কি ওজন কমবে? কলা এমন একটি ফল যা আপনাকে রোগা পাতলা থেকে সুস্বাস্থ্য এবং অতিরিক্ত ওজন থেকে খাবারের তালিকায় কলা রাখলে আপনার ওজন ও কমাতে সাহায্য করবে
রোজ একটা করে কলা খেলে কি হয়?
কলা আপনার শরীরের উচ্চতা রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করবে শুধু তাই নয়। আপনার স্বাস্থ্যকে নানাভাবে উপকৃত করে। তাই আপনার খাবারের মেনুতে অবশ্যই প্রতিদিন একটি হলেও কলা রাখার চেষ্টা করবেন। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। যা আপনার শরীরকে চাঙ্গা করে তুলবে।
দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত?
আমরা মাঝেমধ্যে তাও চিন্তা করি যে কলা দিনে কয়টি খাব? এবং বেশি কলা খেলে কি কি ক্ষতি হয়? বিশেষজ্ঞগণ বলেনঃ একজন মানুষের খাবারের মেনুতে প্রতিদিন দুইটি কলা রাখা সবচেয়ে উপযোগী। তাই আপনি প্রতিদিন দুইটি কলা খেতে পারেন।
কলায় কি ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে?
অনেকের মাথাব্যথার কারণে কলা খেয়ে থাকেন। তা অত্যন্ত ভালো বিষয়। কেননা কলায় রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, যার ফলে আপনার মাথাকে সতেজ করে এবং মাথা ব্যাথা দূর করে।
কলায় কি মেলাটোনিন বেশি থাকে?
কলায় তুলনামূলক শরীরে ভালো মেলাটোনিন তৈরি করে। যার ফলে আপনার ঘুমে সহায়তা করে। আপনার ঘুম কম হলে সেক্ষেত্রে গলা ট্রাই করতে পারেন।
কলা কি সহজপাচ্য?
আমরা অনেকেই এ নিয়ে ভাবি। যে কলা কি সহজে হজম হয়? কলা কি সহজপাচ্য? জি হ্যাঁ – কলা সহজপাচ্য ফল। আপনারা যারা বদ হজম কিংবা হজম শক্তির ব্যাপারে চিন্তাশীল। নির্ভয়ে কলা খেতে পারেন। কেননা কলা খুব সহজেই হজম হয়ে যায়।
কলা কত প্রকার?
কলা ছয় প্রকার যথাঃ
আবরণী কলা
পেশী কলা
যোজক কলা
স্নায়ু কলা
ভাজক কলা
স্থায়ী কলা
পাকা কলা খেলে কি হয়?
পাকা কলা খেলে আপনার শরীরের ওজন বাড়তে এবং কমাতে সাহায্য করবে। তবে এটা নিয়ম মোতাবেক খেতে হবে। আপনি যদি খুব বেশি রুগ্ন পাতলা হন সে ক্ষেত্রে আপনি নিয়মিত তিন থেকে চারটি কলা সেবন করতে পারেন এবং সকালে খাবারের পর এবং দুপুরের খাবারের আগে একটি করে কলা সেবন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরে ভালো প্রোটিন এবং এনার্জি সঞ্চয় করতে সাহায্য করবে।
কলা কি অন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর
আপনার অনেকেই এই চিন্তা করেন যে কলা কি অন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর? আসলে প্রত্যেকটা জিনিসের একটা লিমিট থাকে। আপনি লিমিট মেনে খান তাহলে কলাতে ভালো উপকার পাবেন। তবে যদি, ভালো অভিজ্ঞ ডাক্তার আপনাকে বলে যে কলা অন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ মতে অবশ্যই চলার চেষ্টা করবেন।
আমরা কোন ধরনের কলা খেতাম?
আসলে সব কলারোই প্রোটিন এক। তবে চাপা কলা সাগরকলা থেকে মজাদার এবং সুস্বাদু সেক্ষেত্রে আপনি আপনার পছন্দমত কলা খেতে পারেন।
কোন কলায় প্রোটিন বেশি
পূর্বেই আমরা আলোচনা করেছি কোন কলায় প্রোটিন কমবেশি নেই। সব কলাতেই ভালো প্রোটিন রয়েছে। আপনার পছন্দ মত কলা খাবেন। যেটা খেতে আপনার ভালো লাগে।
হলুদ কলা কি হাইব্রিড?
হলুদ কলা হাইব্রিড কিনা তা জানতে আমরা অনেক আগ্রহ। আসলে অধিকাংশ কলা পাকলে হলুদ বর্ণের দেখায়। সে ক্ষেত্রে হলুদ কলা হাইব্রিড তা বলা চলে না।
কলা দ্রুত পাকার কারণ কি?
কলাতে থাকা ইথিলিন গ্যাস এর ফলে কলা গাছ থেকে কাটার সঙ্গে সঙ্গেই পাকতে শুরু করে। ইথিলিন গ্যাস নিঃসৃত করতে আপনি কলা পেরে সাথে সাথে সমতল স্থানে রেখে দিন।
কলার রং আছে কি?
কলার কালার সাধারণত বেগুনি কিংবা কালো হতে পারে। তবে তা পেকে গেলে হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে।
শেষ কথা
আমরা যথাযথ চেষ্টা করেছি কলা খাওয়ার সঠিক সময় কখন, কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার অপকারিতা সংক্রান্ত বিস্তারিত একটা আর্টিকেল দেওয়ার জন্য। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে। আপনারা কলা সম্বন্ধে ভালো একটি ধারণা পেয়েছেন।