মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড বাংলা – প্রথম ১৫ টি হাদিস।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে অনেক বেশি ভাল আছেন। আমাদের এই আর্টিকেলের সিরিজ টি হলঃ পবিত্র মিশকাত শরীফের সকল হাদিসের অর্থ মাতৃভাষায় উপস্থাপনা করা।
ইনশাল্লাহ আমরা চেষ্টা করব মিশকাত শরীফের সকল হাদিস গুলো ক্রমানুসারে একের পর এক আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার। আমরা যথাযথ চেষ্টা করব অল্প লেখার মাধ্যমে পুরো হাদিসের মূল বিষয়গুলো নিয়ে আসার। وما توفيق الا بالله

হাদিস কাকে বলে?
- হাদিস শব্দ আভিধানিক অর্থ হলো-নতুন/বাণী বা বার্তা।
- হাদিস শব্দের পারিভাষিক অর্থ হলোঃ- হাদিস বলা হয় হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কথা, কাজ ও অনুমোদ এবং মনসম্মতাকে।
মিশকাত শরীফের ১ম হাদিস।
এই হাদিস টি হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) থেকে ।
তিনি বলেনঃ- একদিন আমরা হুজুর (সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। ইতিমধ্যে হঠাৎ করে একজন লোক এসে উপস্থিত হলো। তিনার পোশাক ছিল, সাদা ধবধবে, আর মাথার চুল ছিল কালো কুচকুচে। এবং গায়ে সফর করার কোন চিহ্ন দৃষ্টি হয়নি। অথচ আমরা কেউই তাকে চিনতে পারিনি।
অতঃপর লোকটি হুজুর (সাঃ এর নিকটে গিয়ে বসলেন এবং তার হাঁটুকে হুজুর (সাঃ এর হাঁটুর সঙ্গে হাঁটু মিলিয়ে। এবং তার দুই হাত হুজুর (সাঃ) এর ওরুর উপর রাখল।
তারপর লোকটি বলতে লাগলোঃ
হে মোহাম্মদ (সাঃ) আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করভ (ইসলাম কাকে বলে?)
হুজুর (সাঃ) তার প্রশ্নের উত্তর এইভাবে দিলেন যে ইসলাম হচ্ছেঃ-
- এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল।
- নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে।
- যাকাত আদায় করবে।
- রমজান মাসের রোজা রাখবে।
- সমর্থ হলে হজ পালন করবে।
হুজুর (সাঃ এর জবাব শুনে লোকটি বললেন আপনি সত্যিই বলেছেন।
হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, আমরা এই বিষয়ের উপর আশ্চর্যনিত হলাম যে লোকটি হুজুর (সাঃ) কে প্রশ্ন করেছে (অজ্ঞের মত) কিন্তু উত্তরের সত্যায়ন করেছে বিজ্ঞের মত।
লোকটি পুনরায় রসুল (সাঃ) কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন।
নবী কারীম (সাঃ) বললেন ঈমান হচ্ছে ঃ-
- আল্লাহ,
- তার সমস্ত ফেরেশতা,
- কিতাবসমূহ,
- সমস্ত রাসূল ,
- পরকাল এর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং ভাগ্যের ভালো- মন্দের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা{যে সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে}
জবাব শুনে লোকটি বলল আপনি ঠিক ওই বলেছেন।
অতঃপর লোকটি বলল, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন।
উত্তরের রাসুল (সাঃ) বললেনঃ-
তোমরা আল্লাহর এবাদত এমনভাবে করো, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ, আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও; তাহলে মনে করবে যে স্বয়ং আল্লাহ তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।
লোকটি বলল, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। অর্থাৎ (কেয়ামত কখন হবে?)
তখন রাসুল (সাঃ) বললেন কেয়ামত সম্পর্কে যাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে সে প্রশ্নকারীর চেয়ে বেশি অবহিত নয় (অর্থাৎ বেশি জানেন না)
সে বলল তাহলে আমাকে কেয়ামতের কিছু নিদর্শন সম্পর্কে অবগত করুন।
নবী (সাঃ) বললেন কেয়ামতের নিদর্শন হচ্ছেঃ
- মনিবকে প্রসব করবে তার দাসী।
- যাদের পায়ের জুতা ও পরনে কাপড় নেই নিঃস্ব এবং বকরির রাখাল তারা বড় বড় প্রসাদ তৈরি করতে একে অপরকে সহযোগিতা করবে।
হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, এরপর লোকটি চলে গেল এবং বেশ কিছুক্ষণ সময় আমরা হতভম্ব হয়ে বসে থাকলাম। তারপর রসূল (সাঃ) আমাকে সম্বোধন করে বললেন হে ওমর তুমি কি জানো লোকটি কে? আমি বললাম আল্লাহ এবং তার রাসূল (সাঃ)ই ভালো জানেন।
রাসুল (সাঃ) বললেন ইনি হলেন হযরত জিব্রাইল (আঃ) তিনি এসেছিলেন তোমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য ।-[মুসলিম শরিফ]
হুবহু এই হাদীসটিই হযরত আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন।
তাতে অতিরিক্ত এই কথাগুলো রয়েছে যেঃ-
যখন নগ্ন পদ ও নগ্নদেহ বিশিষ্ট বধির ও বোবাদেরকে পৃথিবীর শাসক হিসেবে দেখবে। (সাথে এই কথা ও আছে)
পাঁচটি এমন বিষয় রয়েছে যেগুলোর জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই (অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কারোই নেই)
অবশেষে নবী (সাঃ) একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন যার অর্থ হলঃ
(নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন এর নিকট কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে এবং কখন বৃষ্টি বর্ষণ করবেন তা একমাত্র তিনিই জানেন।)
-[বুখারী ও মুসলিম]
মিশকাত শরীফের ২য় হাদিস।
এই হাদিসটি বর্ণিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
- এই কথার সাক্ষী দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আল্লাহ তায়ালার বান্দা ও রাসূল।
- নামাজ প্রতিষ্ঠা করা।
- যাকাত দেওয়া।
- হজ করা।
- রমজান মাসের রোজা রাখা।[সহি বুখারী ও মুসলিম]
মিশকাত শরীফের ৩য় হাদিস।
এই হাদিসটি হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন। ঈমানের ৭০ টিরও বেশি শাখা প্রশাখা রয়েছে।
তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম শাখা হচ্ছেঃ
- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা। (বিশ্বাস স্থাপন করা)
আর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছেঃ
- পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করে দেওয়া এবং লজ্জা হল ঈমানের একটি বিশেষ শাখা। –[বুখারী ও মুসলিম]
মিশকাত শরীফের ৪র্থ হাদিস।
এই হাদিসটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন। প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি যার হাত এবং জবান থেকে অন্য মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির বলা হয়, যা আল্লাহ তায়ালা যা নিষেধ করেছেন তা পরিহার করে চলা। এই হাদিসটি ইমাম বুখারী (রাহঃ) এইভাবে বর্ণনা করেন।
ইমাম মুসলিম (রাহঃ) বর্ণনা করেন, একদিন এক ব্যক্তি রাসুল (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ) সর্বোত্তম মুসলমানকে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন যার হাত ও জবান হতে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ রয়েছে।
মিশকাত শরীফের ৫ম হাদিস।
এই হাদিসটি হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)থেকে।
তিনি বলেন রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ- তোমাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি এই সময় পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ থেকে অধিক ভালবাসার পাত্র না হব [বুখারী ও মুসলিম শরীফ]
মিশকাত শরীফের ৬ষ্ঠ হাদিস।
এই হাদীসটি হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন রাসূল এরশাদ করেছেনঃ এমন তিনটি বস্তু রয়েছে যার মধ্যে সেই গুলো বিদ্যমান থাকবে কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিই ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে।
সেগুলো হলঃ
যার মধ্যে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের ভালোবাসা সকল কিছু থেকে অধিক পরিমাণে রয়েছে। [বুখারী মুসলিম শরীফ]
মিশকাত শরীফের ৭ম হাদিস।
এই হাদীসটি হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন ঈমানের স্বাদ ওই ব্যক্তিই আস্বাদন করেছে। যেঃ-
- আল্লাহ তায়ালাকে তার প্রভু
- ইসলামকে দিন।
- এবং হুজুর (সাঃ) কে রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে। –[মুসলিম শরীফ]
মিশকাত শরীফের ৮ম হাদিস।
এই হাদীসটি হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন- যার হাতে মোহাম্মদের জীবন সেই সত্তার কসম। এই উম্মতের যে কেউ, চাই সে ইহুদি বা নাসারা হোক; আমার রিসালাতের কথা শুনে,
কিন্তু আমি যা সহকারে প্রেরিত হয়েছি তার ওপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করে, সেই অবশ্যই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। [মুসলিম শরীফ]
মিশকাত শরীফের ৯ম হাদিস।
এই হাদীসটি হযরত আবু মুসা আশ আরী (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন হুজুর এরশাদ করেছেন ৩ ব্যক্তির জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।
- সেই আহলে কিতাব ওয়ালা যে তাঁর নবীর উপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওপরও ঈমান এনেছে।
- সেই ক্রীতদাস- যে তার মনিবের হক আদায় করেছে, আল্লাহর হক আদায় করার সাথে সাথে।
- কোন ব্যক্তির ক্রীতদাসী ছিল, যার সাথে সে সহবাস করত, অতঃপর সে তার ক্রীতদাসীকে উত্তমরূপে আদব-কায়দা শিখিয়েছে। এবং উত্তমরূপে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে। এরপর তাকে আজাদ করে বিবাহ করেছে।
-[বুখারী ও মুসলিম]
মিশকাত শরীফের ১০ম হাদিস।
এই হাদীসটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন রসূল এরশাদ করেছেনঃ-আমাকে এইমর্মে আদেশ করা হয়েছিল যে আমি যেন ওই সমস্ত লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাই, যারা এই সাক্ষ্য প্রদান না করে ঃ-
- যে আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই।
- মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল ।
- নামাজ প্রতিষ্ঠা না করে ।
- এবং যাকাত আদায় না করে।
আর তারা যখন এসব কাজ করবে, আমার পক্ষ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ নিরাপদে থাকবে। কিন্তু দ্বীন ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোন দণ্ডপ্রাপ্ত ভুল করে থাকলে, অবশ্যই তা ভোগ করতে হবে। আর তাদের অন্তরের ব্যাপারে হিসাব নিকাশের ভার একমাত্র আল্লাহর ওপরেই ন্যস্ত –[বুখারী ও মুসলিম শরীফ]
মুসলিম শরীফে -(ইসলামের দন্ড ব্যতীত) বাক্যটির উল্লেখ নেই।
মুসলিম শরীফের ১১ তম হাদিস।
এই হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-সেই ব্যক্তি অবশ্যই মুসলমান যার মধ্যে নিম্নলিখিত গুণগুলি পাওয়া যাবে।
- আমাদের নেই নামাজ পড়ে।
- আমাদের কেবলা কি ক্যাবলা হিসেবে স্বীকার করে।
- আমাদের জবাইকৃত পশু খায়।
তার জান মাল রক্ষার ব্যাপারে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই জিমাদার। অতএব তোমরা আল্লাহর প্রতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করো না। (বুখারী শরীফ)
মিশকাত শরীফের ১২ তম হাদিস।
এই হাদীসটি হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) তা’আলা আনহু থেকে।
তিনি বলেন একদা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর দরবারে একজন বেদুইন আগমন করে বলল হে মুহাম্মদ (সাঃ) আমাকে এমন একটি কাজের পথ প্রদর্শন করুন যার ফলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব।
রাসুল (সাঃ) পড়ে তাকে যা বললঃ
- আল্লাহর এবাদত করবে এবং তার সাথে কারোর সঠিক করবে না।
- ফরজ নামাজ সমূহ আদায় করবে।
- যাকাত প্রদান করবে।
- রমজানের রোজা রাখবে।
লোকটি বলল সে সত্তার শপথ যার হাতে আমার জীবন। আমি এর কমও করবো না বেশিও করব না।
অতঃপর যখন লোকটি হুজুর (সাঃ) এর দরবার থেকে চলে গেলেন। তখন নবী (সাঃ) বললেন। যদি কোন ব্যক্তি জান্নাতি লোক দেখতে চায়ঃ সে যেন এই লোকটিকে দেখে –(বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
মিশকাত শরীফের ১৩ তম হাদিস।
এই হাদিসটি হযরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ সাকাফি (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন একদা আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আপনি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে এমন একটি কথা বলে দিন, যা সম্পর্কে আপনার পরে আমি আর কাউকে জিজ্ঞেস করবো না। তখন রসূল (সাঃ) বললেন,
আল্লাহর উপর ঈমান আনায়ন করেছি এটা বলো এবং এর উপর অবিচল থাকো।-(মুসলিম শরীফ)
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা মাদ্রাসার তালিকা
মিশকাত শরীফের ১৪ তম হাদিস।
এই হাদীসটি হযরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন রসূল (সাঃ) এর দরবারে একদিন এক নজদের নিকটবর্তী অধিবাসী আগমন করলো। যার মাথার চুল ছিল বিক্ষিপ্ত। আমরা তার ফিসফিস আওয়াজ শুনতে ছিলাম; কিন্তু কিছুই বুঝতেছিলাম না।
সে রসূল (সাঃ) এর নিকটবর্তী হল এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করল।
তার জবাবে রাসূল তাকে বললেনঃ-
দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো। অতঃপর লোকটি বলল এছাড়া আমার ওপর আর কোন ফরজ নামাজ আছে কি? রাসূল বললেন না তবে তুমি চাইলে নফল পড়তে পারো।
এর পরে রসুল (সাঃ) বললেন রমজান রোজা রাখো। অতঃপর লোকটি রসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন এ ছাড়া আমার আর কোন কর্তব্য {ফরজ রোজা} আছে কি? রসুল (সাঃ) বললেন না তবে চাইলে নফল হিসেবে রাখতে পারো।
বর্ণনাকারী অর্থাৎ (হযরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) বলেন
রাসুল (সাঃ) তার নিকট যাকাতের কথাও উল্লেখ করেন। তখন ঐ লোকটি আবার রসূল (সাঃ) কে বলল, এটা ছাড়া আমার উপর আর কোন কর্তব্য আছে কি? রাসূল (সাঃ) বললেন না তবে নফল হিসেবে দান করতে পারো।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি এই কথা বলতে বলতে চলে গেলেন যে ,আল্লাহর কসম আমি এর থেকে কম ও করব না বেশিও করব না।
রসূল (সাঃ) বললেন যদি লোকটি সত্যি বলে থাকে তবে সে সফলকাম (সাঃ)-[বুখারী ও মুসলিম]
মিশকাত শরীফের ১৫তম হাদিস।
এই হাদিসটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন, আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিরা যখন রসূল এর নিকট আগমন করলো তখন রসূল জিজ্ঞেস করলেন এরা কোন গোত্রের অথবা কোন প্রতিনিধি দল?
তারা বলল আমরা রাবেয়া গোত্রের লোক হুজুর(সাঃ) বললেন ওই সম্প্রদায়ের দলের আগমন শুভ হোক যারা বিনা লাঞ্ছনা ও বিনা লজ্জায় এসেছে।
তখন তারা রসূলকে বললেন হে রাসূল(সাঃ) আমরা হারাম মাস ব্যতীত অন্য সময় আপনার নিকট আসতে পারি না।
কেননা আমাদের এবং আপনাদের সীমানার মাঝে কাফির মুযার গোত্রটি বসবাস করে, তাই আপনি আমাদেরকে এমন কিছু স্পষ্ট বিষয় নির্দেশ করুন যেগুলো আমরা আমাদের পিছনের লোকদের নিকট পৌঁছে দিবো এবং সেগুলোর উপর আমরা আমল করব এবং বেহেশতে প্রবেশ করব
অতঃপর তারা রসূলকে হারাম পানিয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরের রসুল (সাঃ) তাদেরকে চারটি বিষয় নির্দেশ দিলেন। তা নিম্নে দেয়া হলোঃ
- তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো।তিনি বললেন তোমরা কি জানো আল্লাহর প্রতি ঈমান আনায়নের তাৎপর্য কি? তারা বললেন না। রাসূল (সাঃ) বললেন এই সাক্ষ্য প্রদান করার যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল।
- নামাজ প্রতিষ্ঠা কর।
- যাকাত প্রদান কর।
- রমজানের রোজা রাখ।
- এবং গনিমতের এক পঞ্চমাংশ প্রদান কর।
তারপর রাসুল (সাঃ) তাদেরকে চারটি জিনিস ব্যবহার করতে নিষেধ করলেন। তার নিম্নে দেয়া হলোঃ
- মাটির তৈরি সবুজ কলসি।
- কদুর শুকনা খোল।
- খেজুর বৃক্ষ মূলের পাত্র।
- আলকাতরা দ্বারা মালিশ কৃত পাত্র।
এরপর বললেন এই কথাগুলো সংরক্ষণ করবে এবং তোমাদের সম্প্রদায়ের অবশিষ্ট লোকদের কাছে পৌঁছে দেবে।-[বুখারী ও মুসলিম]
পড়ুনঃ মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড বাংলা-১৬ থেকে ২৪ নং হাদিস