মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড বাংলা-১৬ থেকে ২৪ নং হাদিস।
সরল ভাষায় ১৬ থেকে ২৪ নং হাদিস
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক!
পূর্বের সিরিজে আমরা মিশকাত শরীফ ১ম খন্ডের ১৫টি হাদিস সংক্ষিপ্তকারে আপনাদের মাঝে উপস্থাপনা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম।
আজকের আর্টিকেলে আমরা পরবর্তী আরো ৯টি হাদিস সহজ ভাবে মাতৃ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।

মিশকাত শরীফের ১৬ নং হাদিস।
এই হাদিসটি হযরত ওবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন একদিন সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসূলকে ঘিরে বসে ছিলেন অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ওই সাহাবায়ে কেরামদেরকে কিছু বিষয়ে রাসুলের কাছে বায়াত গ্রহণ করতে বললেন সে বিষয়গুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ
- তোমরা আল্লাহর কে কারো সাথে শরিক করিও না
- চুরি করিও না
- ব্যভিচার করিও না
- তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করিও না
- কারো প্রতি মনগড়া মিথ্যা অপবাদ দিও না
- এবং সৎকাজে অবাধ্য হইও না
অতঃপর রাসুল বলেন যে কেউ এই ওয়াদা পালন করবে তার সম্পূর্ণ প্রতিদান আল্লাহর উপর নেস্ত। আর যে ব্যক্তি এগুলোর কোন একটি করে দুনিয়াতে শাস্তি পায়, তার জন্য সেই শাস্তি কাফফারা স্বরূপ।
আর যে ব্যক্তি এগুলোর কোন একটি অপরাধ দুনিয়াতে করলো এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার কর্ম গোপন রাখল, তাহলে সেই ব্যাপারটি আল্লাহ তার ইচ্ছা দিন।
তিনি চাইলে তাকে মাফ করবেন, আর চাইলে শাস্তি দিবেন, ওবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) বলেন তখন আমরা ঐ শর্তে রসুলের নিকট বায়াত হলাম
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
মিশকাত শরীফের ১৭ নং হাদিস
এই হাদিসটি হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন একবার রাসুল (সাঃ) যেকোনো এক ঈদের দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে রওনা হোন। যে অবস্থায় তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাদেরকে খেতাব করে বললেনঃ
হে নারী সমাজ তোমরা বেশি বেশি করে আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করার। কারন আমাকে দেখানো হয়েছে তোমাদের অধিকাংশই জাহান্নামী।
অতঃপর মহিলারা বলল ইয়া রাসুল আল্লাহ জাহান্নামী কেন?
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন তোমরা বেশি বেশি করে লানত দিয়ে থাকো এবং তোমাদের স্বামীর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো। তোমাদের নারীদের চেয়ে অধিক একজন চতুর বুদ্ধিমান পুরুষের জ্ঞান হরণ এবং দিন ও জ্ঞানের অপূর্ণ আর কাউকে আমি দেখিনি।
অতঃপর তারা রসুল (সাঃ) কে আবার প্রশ্ন করলেন হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) দীন ও জ্ঞানের ব্যাপারে আমাদের অপূর্ণতা কি?
তিনি বললেন নারীর সাক্ষ্য কি পুরুষের স্বাক্ষর অর্ধেক নয়?
মহিলাগণ বললো হ্যাঁ। রসূল বললেন এটাই জ্ঞানের অপূর্ণতা।
রসুল (সাঃ) আবারো বললেন মহিলা গন যখন ঋতুবর্তী হন তখন তারা নামাজ পড়ে না এবং রোজাও রাখে না এমনটি নয় কি?
তারা বললো হ্যাঁ। রাসুল(সাঃ) বললেন এটিই তাদের দিনের অপূর্ণতা
(বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ১০ টি মাদ্রাসার তালিকা
মিশকাত শরীফের ১৮ নং হাদিস
হাদিসটি হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন। আদম সন্তান আমাকে মিথ্যা আরোপ করেছে এবং আমাকে গালমন্দ করেছে। অথচ এটা তাদের জন্য উচিত ছিল না এবং তাদের জন্য শোভা পায় না।
আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ এইভাবে করা হলো যেঃ
তারা বলে আল্লাহ আমাকে যেভাবে প্রথম সৃষ্টি করেছেন সেভাবে পুনরায় কখনো সৃষ্টি করতে পারবেন না।
অথচ আমার পক্ষে প্রথমবারের সৃষ্টি দ্বিতীয়বারের চেয়ে কিছুতেই সহজ ছিল না (অর্থাৎ আমি প্রথমবার যদি সৃষ্টি করতে পারি তাহলে দ্বিতীয়বার কেন নয় দ্বিতীয়বার সৃষ্টি তো আগের তুলনায় আরো সহজ হওয়ার কথা কিন্তু তারা এই বিষয়ে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে যে আল্লাহ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে পারবেন না)
আমাকে গালমন্দ এইভাবে করা হলো যেঃ
তারা বলে আল্লাহ তায়ালা সন্তান গ্রহণ করেছেন।
অথচ আমি এক এবং অদ্বিতীয় এবং কারো মুখাপেক্ষী নই। আমি কাউকে জন্ম দেয়নি এবং কারো থেকে জন্মও নেইনি এবং আমার সমকক্ষ কেউই নয়।
আর এই হাদিসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এভাবে বর্ণনা করেন যেঃ
আমাকে মন্দ বলা এইভাবে যেঃ
কেউ এই কথা বলা যে আমার সন্তান রয়েছে অথচ আমি স্ত্রী পুত্র গ্রহণ হতে মুক্ত।
(বোখারী)
মিশকাত শরীফের ১৯ নং হাদিস
হাদিসটি হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেনঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয় সময় বা কালকে বৎসনা করে, অথচ আমি কাল (তথা আমি কালকে সৃষ্টি করে তাকে পরিবর্তন করে থাকি) আমার মুঠোই এসব কিছু, আমি রাত এবং দিনকে চক্রাকারে ঘুরাই।
(মুসলিম এবং বুখারী)
মিশকাত শরীফের ২০ নং হাদিস
হাদিসটি হযরত আবু মুসা আশ,আরী (রাঃ) থেকে।
তিনি বলেন রসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ
কষ্ট দেয় এ কথা শোনার পরও সে ব্যাপারে আল্লাহর চেয়ে অধিক ধৈর্য ধারণকারী আর কেউ নেই। মানুষ তার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে (এরপরও তিনি ধৈর্য ধারণ করেন এবং) তাদেরকে নিরাপদে রাখেন এবং প্রদান করেন।
(বুখারী -মুসলিম)
মিশকাত শরীফের ২১ নং হাদিস
হাদিসটি হযরত মু’আয ইবনে জাবাল থেকে (রাঃ) বর্ণিত।
তিনি বলেন একদিন আমি রসূল (সাঃ) এর (পিছনে) গাধার উপর আরোহন করলাম। আমার এবং রাসূলের মাঝে হাওদার কাট ছাড়া অন্য কোন ব্যবধান ছিল না।
রসূল আমাকে বললেন হে মুয়া,জ!
তোমার কি জানা আছে বান্দার উপর আল্লাহর কি অধিকার এবং আল্লাহর উপর বান্দার কি অধিকার আছে?
আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ) এ ব্যাপারে ভালো জানেন।
অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন বান্দরের উপর আল্লাহর এই অধিকার রয়েছে যে তারা শুধু আল্লাহর বন্দেগী করবে এবং তার সাথে কাউকে শরিক করবে না।
আর আল্লাহ তাআলার উপর বান্দার এই অধিকার রয়েছে যে! যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করবে না। আল্লাহ যেন তাকে কোন প্রকাশ শাস্তি না দেন।
তারপর আমি (মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) বললাম
হে আল্লাহর রাসূল আমি কি লোকদেরকে এই সংবাদ পৌঁছে দেব না?
রসুল বললেন না! কারণ লোকেরা শুধু এর উপর ভরসা করে বসে থাকবে।
(বুখারী-মুসলিম)
মিশকাত শরীফের ২২ নং হাদিস
হাদিসটি হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
একদিন রাসূল এবং মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) একই সাওয়ারিতে বসা ছিলেন। মু’আয ছিলেন রসুল (সাঃ) পিছে।
রসূল (সাঃ) তিনবার ডাকলেন হে মু’আয।
প্রতিবারই তিনি বললেন ইয়া রাসুলআল্লাহ আমি হাজির আছি ও প্রস্তুত রয়েছি।
এরপর রসুল (সাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি সত্যিকার ভাবে অন্তর দিয়ে এ সাক্ষ্য প্রদান করেছে আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল।
আল্লাহ তার ওপর জাহান্নাম করে দিবেন।
অতঃপর মু’আয বললেন হে আল্লাহর রাসূল আমি কি মানুষদেরকে এই সংবাদ পৌঁছে দিবো না? যাতে মানুষগণ আনন্দিত হয়।
রাসূল বললেন না। তাহলে তারা এর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে।
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন (হাদিস গোপনের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে) শুধু মৃত্যুকালে তিনি লোকদের নিকট এই সংবাদ পৌঁছে যান।
(বুখারী-মুসলিম)
পড়ুনঃ কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ
মিশকাত শরীফের ২৩ নং হাদিস
হাদিসটি হযরত আবুযর গিফার (রাঃ)থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন আমি একদিন রসূল (সাঃ) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। যে অবস্থায় রসূল (সাঃ) সাদা কাপড়ে আবৃত হয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন।
কোন বান্দা যদি এ কথা বলে যে,
আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই।
অতঃপর সেই মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সে যদি ব্যভিচার এবং চুরি করে। (এইভাবে তিনি দুইবার বললেন)
প্রত্যেকবার আল্লাহর রাসূল (সাঃ) একই উত্তর দিলেন যে, হ্যাঁ যদি ও সে ব্যভিচার এবং চুরি করে।
আবুযরের নাক ধুলায় দুসরিত হলেও (অর্থাৎ পছন্দ না হলেও)
এই হাদিসটি বর্ণনাকারী বলেন আবুযর (রাঃ) যখন এই হাদিসটি বর্ণনা করতেন তখন রাসূলের বাণী আবুযরের নাক ধুলায় ধুসরিত হলেও এই বাক্যটি বলতেন।
(বোখারী-মুসলিম)
মিশকাত শরীফের ২৪ নং হাদিস
হাদিসটি হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন রাসুল এরশাদ করেছেনঃ
যে ব্যক্তি এই কথার সাক্ষ্য দেয় যে,
- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ছাড়া কোন মাবুদ নাই তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। তার কোন অংশীদার নেই।
- এবং নিঃসন্দেহে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার বান্দা এবং প্রেরিত রাসুল।
- অবশ্যই হযরত ঈসা আল্লাহর বান্দা ও তারই রাসূল এবং আল্লাহর বাদির পুত্র ও তার বাক্য কুন দ্বারা সৃষ্টি যা তিনি মারিয়াম এর নিকট পৌঁছিয়েছেন। এবং তার পক্ষ থেকে প্রেরিত একটি রুহ মাত্র।
- আর যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, জান্নাত এবং জাহান্নাম সত্য।
আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের প্রবেশ করাবেন তার আমল যাই হোক না কেন।
(বোখারী-মুসলিম)
আরো পড়ুনঃ সরল ভাষায় মিশকাত শরীফের প্রথম ১৫ টি হাদিস।