তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ত ও ফজিলত – tahajjud namaz porar niom

আমরা অনেকেই কখনো তাহাজ্জত না পড়ায় কিংবা মাঝেমধ্যে পড়ে থাকায়। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানিনা। তাই আজ আমরা tahajjud namaz porar niom bangla এবং এর আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি গুলো আপনাদের মাঝে সুন্দরভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
ভূমিকা
তাহাজ্জুদ নামাজ এমন এক নামাজ যার মাধ্যমে বান্দা তার প্রভুর সাথে গভীর সম্পর্ক করে থাকেন। এক কথায় যদি বলি মালিক যেমনিভাবে তার অধীনস্থ কর্মচারীর ওভারটাইম পছন্দ করে। ঠিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও তার বান্দাদের থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পছন্দ করেন।
কেননা দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বান্দার উপর ফরজ (অর্থাৎ আবশ্যক) আর তাহাজ্জুদ নামাজ একটি অপশনাল নামাজ পড়তেই হবে এরকম জবরদস্ত নাই।
যে কেউ তাহাজ্জুদ পড়লো কেমন যেন তার মালিকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত ওভারটাইম করল।
কোরআনের বিভিন্ন সূরায় এই নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজ নফল ইবাদত গুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।
এই নামাজ ঘুম ত্যাগ করে গভীর রজনীতে আদায় করতে হয় তাই আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর প্রতিদান ও বেশি দিয়ে থাকেন। রব্বে কারীম তার প্রিয় নবী সাঃ কে এই নামাজ পড়তে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবীজিকে সম্বোধন করে বলেন রাত্রের কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক। হয়তোবা আপনার পালনকর্তা আপনাকে প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ট করবেন (সূরা বনী ইসরাঈল)
তাহাজ্জুদ নামাজকে সালাতুল লাঈল বা কিয়ামুল লাইল নামাজ ও বলা হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
এশার সালাতের পরে বা রাতের দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো।
শেষ রাত্রে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার সর্বোত্তম। রাত ৩ ৪ টার আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা সবচেয়ে সঠিক সময়। তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম।
আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন ফরজ নামাজের পর সকল নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নামাজ হল তাহাজ্জুদ নামাজ, তথা রাতের নামাজ।
মনে রাখবেন যখনই ফজরের ওয়াক্ত শুরু হবে ঠিক তখনই তাহাজ্জুদের সময় শেষ হয়ে যায়। এবং যদি কেউ ওই সময় তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করে তাহলে তার নামাজ আদায় হবে না।
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত
আসলে তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। সর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে ৮ রাকাত পড়তে হবে এমন নয়।
যদি সম্ভব হয় ১২ রাকাত আদায় করবেন। তবে আট রাকাত পড়াই উত্তম। ৮ রাকাত আদায় করতে সম্ভব না হলে চার রাকাত আদায় করবেন। যদি তাও সম্ভব না হয় অন্তত দুই রাকাত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করা ভালো।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত দুইভাবে করা যায়।
- আরবি
- বাংলা
যদি সঠিকভাবে আরবীতে নিয়ত পারেন তাহলে আরবীতে করবেন। অন্যথায় বাংলাতে করবেন। কেননা শুধু শুধু গুনাহ হওয়ার থেকে বাংলা করাই ভালো। তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা – আরবি নিয়ত জানতে ক্লিক করুন।
তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা
তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হবে? এরকম প্রশ্ন অনেককেই করতে দেখা যায়। যে কোন সূরা দিয়ে এই নামাজ আদায় করা যায়। যেহেতু তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম। তাই অন্যান্য সুন্নত ও নফল নামাজের মত আস্তে সূরা পড়বেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা কেরাত আস্তে আস্তে পড়তে হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম যত সম্ভব রাত্রির নামাজগুলোতে লম্বা কেরাত লম্বা রুকু ও সাজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে আদায় করতেন। তাই সাধ্য অনুযায়ী লম্বা ক্যারাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজে যে সমস্ত সূরা পড়তে পারেনঃ
- সূরা মুজাম্মিল
- সূরা মুদ্দাসসির
- সূরা মুলক
- সূরা ওয়াকিয়া
- সূরা দুখান
- সূরা আর রহমান
- সুরা ইয়াসিন
- সূরা হাশর
- সূরা কাহাফ
তেলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ফজিলত পূর্ণ। তবে আপনি চাইলে ছোট সূরা পড়তে পারেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম – tahajjud namaz porar niom
তাহাজ্জুদের সঠিক নিয়ম গুলো আমরা স্টেপ বাই স্টেপ ক্রমানুসারে নিম্নে দেওয়ার চেষ্টা করেছিঃ
- অজুসেরে পবিত্র অবস্থায় জায়নামাজে দাঁড়ান।
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করুন।
- তাকবীরে তাহরীমা “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বাঁধন।
- ছানা পড়ুন।
- আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ুন।
- সূরা ফাতেহা পড়ুন।
- অন্য আরেকটি সূরা মিলান।
- অন্যান্য নামাজের নেয় রুকু সেজদা আদায় করে পুনরায় দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ুন।
- পূর্বের ন্যায় সুরা ফাতেহা এবং অন্য আরেকটি সূরা মিলিয়ে রুকু সেজদা আদায় করুন।
- দুই রাকাত শেষে এবার বৈঠক করুন।
- তাশাহুদ/দরুদ শরীফ/দোয়ায়ে মাসুরা শেষ করুন।
- সব শেষে আসসালামুয়ালাইকুম বলে নামাজ শেষ করুন।
এই ভাবেই ২ – ২ করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজ ভঙ্গের কারণ জানতে এখানে ক্লিক করুন।
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
পুরুষ এবং মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই সেইম নিয়মেই মহিলারা তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পন্ন করবেন।
মনে রাখবেন ওই ভেঙ্গে গেলে যে কোন নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে তাই ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ জেনে নিন।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটের সবচেয়ে বড় মাধ্যম আজ তাহাজ্জুদ। ফরজ নামাজের পর মর্যাদার দিক দিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ সবচেয়ে বেশি। রসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ নামাজের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ।
প্রশ্নোত্তর
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন?
এশার নামাজের পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু পর্যন্ত।
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?
তাহাজ্জুদ নামাজ নফল এবং রসূল সাঃ বলেছেন মর্যাদার দিক দিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে বেশি।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?
আপনি তাহাজ্জত নামাজ দুই দুই করে ৮ রাকাত কিংবা এর চেয়ে কম বেশি করেও পড়তে পারেন। তবে উত্তম হলো আট রাকাত পড়া।
তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হবে?
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই আপনার পছন্দের যে কোন সূরার দিয়েতাহাজ্জুদ নামাজ আদায় পারেন।
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কি ভিন্ন?

না তাহাজ্জুদ নামাজের ক্ষেত্রে মহিলাদের আলাদা কোন পদ্ধতি নেই। পুরুষ এবং মহিলা একই নিয়মে তাহাজ্জত আদায় করবে। তবে হ্যাঁ আল্লাহ প্রদত্ত যে সমস্ত ভিন্নতা তা সকল নামাজের ক্ষেত্রেই এক। শুধু তাহাজদে নয়।
শেষ কথা
প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা এই সময় প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন। তাই নফল ইবাদত উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন ছাড়া গোপনে পরাই উত্তম।
মনে রাখবেন আপনার জন্য কারো ঘুমের ব্যাঘাত যেন না হয় এবং অন্যকে দেখানোর মন মানসিকতা যেন না থাকে। এ বিষয়ে যত সম্ভব সতর্ক থাকতে হবে।
তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অতি উত্তম। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে যথার্থভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন।